রাতের আকাশে খালি চোখে তুমি অসংখ্য তারা বা নক্ষত্র দেখতে পাও। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তুমি সেই নক্ষত্রসমূহকে আরও স্পষ্ট দেখতে পাও। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে অনেক দূরের বস্তুও বড় দেখায়। এটি আমাদেরকে মহাকাশের দূরবর্তী বস্তু পর্যবেক্ষণে সাহায্য করে। মহাকাশের গ্রহ, নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সি নিয়ে গবেষণা করতে বিজ্ঞানীরা দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন।
প্রশ্ন : মহাবিশ্ব কত বড় ?
কাজ : আলো কত দ্রুত চলতে পারে
কী করতে হবে :
১. নিচে দেখানো ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
পৃথিবী থেকে দূরত্ব | কত সময় লাগে? | |
---|---|---|
চাঁদ | ৩,৮৪,৪০০কি.মি. | |
সূর্য | ১৫,০০,০০,০০০কি.মি. |
২. আলো এক সেকেন্ডে ৩,০০,০০০ কি.মি. বেগে চলে। চাঁদ এবং সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে কত সময় লাগে তা হিসাব করি।
৩. উত্তরগুলো ছকে লিখি ।
8. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩,৮৪,৪০০ কি.মি.। আলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩,০০,০০০ কি.মি. বেগে চলে। আর তাই, চাঁদ থেকে পৃথিবীতে আলো পৌঁছাতে ১.৩ সেকেন্ড সময় লাগে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫,০০,০০,০০০ কি.মি.। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো এসে পৌঁছাতে প্রায় ৮ মিনিট সময় লাগে। তার মানে হলো আমরা সবসময়ই সূর্য থেকে ৮ মিনিট পূর্বে উৎসরিত আলো দেখতে পাই।
যদি আমরা আলোর গতিতে চলতে পারতাম তবে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে আমাদের ১,৩০,০০০ বছর সময় লাগত । মহাকাশের গ্যালাক্সিসমূহের মধ্যে মিল্কিওয়ে একটি গ্যালাক্সি। স্যার এডিংটনের মতে, প্রতি গ্যালাক্সিতে গড়ে দশ সহস্ৰকোটি নক্ষত্র রয়েছে।
মহাবিশ্ব এখনও প্রসারিত হচ্ছে। আর এই কারণে মহাবিশ্বের প্রকৃত আকার সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন না। তবে মহাকাশ সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণা থেকে আমরা ধারণা করতে পারি, মহাবিশ্ব কত বড়। মহাকাশ সম্পর্কিত গবেষণাকে বলা হয় জ্যোতির্বিজ্ঞান। বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি যেমন—দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করছেন। গ্যালিলিও গ্যালিলি উন্নত দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে প্রমাণ করেছেন যে, সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছেন এবং মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
প্রশ্ন : পৃথিবী কীভাবে ঘুরে?
পৃথিবী সৌরজগতের একটি গ্রহ। অন্যান্য গ্রহের মতো পৃথিবীও সূর্যের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট পথে ঘুরে। যে পথে পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহসমূহ সূর্যকে আবর্তন করে তাকে কক্ষপথ বলে। সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৃথিবীর আবর্তনকে বার্ষিক গতি বলে। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা সময় লাগে ।
সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণনের সাথে সাথে পৃথিবী লাটিমের মতো নিজ অক্ষের উপরে ঘুরছে। নিজ অক্ষের উপর পৃথিবীর এই ঘূর্ণায়মান গতিকে পৃথিবীর আহ্নিক গতি বলে। নিজ অক্ষে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট সময় লাগে যা একটি দিনের সমান। অক্ষ হলো কোন বস্তুর কেন্দ্র বরাবর ছেদকারী কাল্পনিক রেখা। পৃথিবীর অক্ষরেখাটি একে উত্তর-দক্ষিণ মেরু বরাবর ছেদ করেছে। পৃথিবীর অক্ষরেখাটি কিছুটা হেলে রয়েছে।
প্রশ্ন : দিন এবং রাত কীভাবে হয় ?
কাজ : দিন এবং রাত হওয়ার কারণ
কী করতে হবে :
১. পৃথিবীর নমুনা স্বরূপ একটি ভূগোলক বা বল, একটি স্টিকার এবং সূর্যের নমুনা স্বরূপ একটি উজ্জ্বল টর্চ নেই।
২. নিচের ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
৩. ভূগোলকে বাংলাদেশের উপর স্টিকার লাগাই।
৪. শ্রেণিকক্ষটি অন্ধকার করে ভূগোলকের উপর টর্চ এর আলো নিক্ষেপ করি।
৫. ভূগোলকটি পর্যবেক্ষণ করে ছকে তার ছবি আঁকি ।
৬. ভূগোলকটি ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ধীরে ধীরে ঘুরাই এবং স্টিকারটির অবস্থান পর্যবেক্ষণ করি।
৭. ভূগোলকটির কোন পাশে দিন বা রাত তা নিয়ে চিন্তা করি।
৮. নিজের ধারণাটি খাতায় লিখি।
৯. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে দিন এবং রাত হয়।
দিন এবং রাত
পৃথিবী প্রতি ২৪ ঘণ্টায় নিজ অক্ষে একবার সম্পূর্ণ ঘুরছে। আর এ কারণে প্রতিদিন সকালে সূর্য উঠে এবং সন্ধ্যায় অস্ত যায়। পৃথিবীর একদিক সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এবং অপর দিক সূর্যের বিপরীতে থাকে। যে দিকটা সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে সেই দিকটায় দিন এবং যে দিকটা বিপরীত দিকে থাকে সেই দিকটায় রাত হয়।
সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত
প্রতিদিনের সূর্যকে দেখে মনে হয় যে, এটি সকালে পূর্ব দিকে উঠে এবং দিনের শেষে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষের উপর পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণেই এমনটি হয়। পৃথিবীর এই ঘূর্ণনের কারণে সূর্য পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে তার অবস্থান পরিবর্তন করছে বলে মনে হয় ।
বছরে আমরা ছয়টি ঋতু দেখতে পাই। যেমন— গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত এবং বসন্ত।
প্রশ্ন : ঋতু পরিবর্তন কেন হয় ?
কাজ : দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্য
কী করতে হবে:
১ . পৃথিবীর নমুনা স্বরূপ একটি ভূগোলক, দাগ মুছে ফেলা যায় এমন মার্কার, পরিমাপক ফিতা এবং সূর্যের নমুনা স্বরূপ একটি উজ্জ্বল টর্চ নেই ।
২. নিচের ছকটির মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
ক টর্চের অভিমুখে উত্তর মেরু | খ টর্চের বিপরীতে উত্তর মেরু | |
---|---|---|
দিনের দৈর্ঘ্য (সে.মি.) | ||
রাতের দৈর্ঘ্য (সে.মি) |
৩. মার্কার দিয়ে ভূগোলকের উপর বাংলাদেশ বরাবর গোল করে একটি দাগ দিই ।
৪. একটি টেবিলের উপরে টর্চটি রাখি ।
৫. ভূগোলকটি ছবি ক-এর মতো করে রাখি।
৬. ফিতা ব্যবহার করে দাগ বরাবর দিন এবং রাতের গোলীয় অংশের দৈর্ঘ্য মাপি এবং পরিমানটি ছকে লিখি ।
৭. ভূগোলকটি ছবি খ-এর মতো করে রাখি ।
৮. ফিতা ব্যবহার করে দাগ বরাবর দিন এবং রাতের গোলীয় অংশের দৈর্ঘ্য মাপি এবং তা ছকে লিখি ।
৯. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
পৃথিবীর নিজস্ব কক্ষপথে ঘূর্ণন এবং সূর্যের দিকে এর হেলে থাকা অক্ষের কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর আবর্তনের জন্য বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে বা সূর্যের বিপরীত দিকে সরে পড়ে।
গ্রীষ্মকাল
যখন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে সে অংশে তখন গ্রীষ্মকাল। এ সময় উত্তর গোলার্ধে সূর্য খাড়াভাবে কিরণ দেয়। ফলে দিনের সময়কাল দীর্ঘ হয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এসময় দক্ষিণ গোলার্ধে উলটা ব্যাপারটি ঘটে। সেখানে তখন শীতকাল ।
শীতকাল
যখন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের বিপরীত দিকে হেলে থাকে সে অংশে তখন শীতকাল। এ সময় উত্তর গোলার্ধে সূর্য তীর্যকভাবে কিরণ দেয়। ফলে দিনের চেয়ে রাত বড় হয় এবং তাপমাত্রা হ্রাস পায় ।
চাঁদ কখনো বড় আবার কখনো ছোট এবং কখনো গোলাকার বা অর্ধ-গোলাকার মনে হয় । চাঁদের উজ্জ্বল অংশের আকৃতির এরূপ পরিবর্তনশীল অবস্থাকে চাঁদের দশা বলে ।
প্রশ্ন : চাঁদের দশা কেন পরিবর্তিত হয় ?
কাজ : একটি বলের বিভিন্ন দশা
কী করতে হবে :
১. সূর্যের নমুনা স্বরূপ একটি উজ্জ্বল বাতি বা টর্চ, চাঁদের নমুনা স্বরূপ একটি সাদা বল (যেমন—টেনিস বল, ক্রিকেট বল) নিই।
২. নিচে দেখানো ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
ক. অবস্থান | খ. অবস্থান | গ. অবস্থান | ঘ. অবস্থান |
---|---|---|---|
|
|
|
৩. মোমবাতি বা টর্চটি জ্বালিয়ে শ্রেণিকক্ষের আলো নিভিয়ে দিই।
৪. বলটি ‘ক’,‘খ’,‘গ’ ও ‘ঘ’ অবস্থানে রাখি।
৫. ‘ঙ’ অবস্থান থেকে প্রতিটি অবস্থানের জন্য বলটির পৃষ্ঠদেশ পর্যবেক্ষণ করি। (দ্রষ্টব্য: ‘গ’ অবস্থানে বলটি পর্যবেক্ষণের সময় লক্ষ রাখতে হবে যাতে বলের উপর নিজের ছায়া না পড়ে।)
৬. একইভাবে বাকি অবস্থানের বলগুলো পর্যবেক্ষণ করি এবং তার ছবি আঁকি ।
৭. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
চাঁদের আবর্তন
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। উপগ্রহ হলো সেই বস্তু যা কোন গ্রহকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। চাঁদ তার নিজের অক্ষ বরাবর প্রায় ২৮ দিনে একবার ঘুরে এবং একই সাথে পৃথিবীর চারদিকেও একবার ঘুরে আসতে চাঁদের প্রায় ২৮ দিন সময় লাগে।
চাঁদের ঘূর্ণন
চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। চাঁদ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে। চাঁদের অর্ধাংশ সূর্যের আলোতে সবসময়ই আলোকিত। কিন্তু পৃথিবীকে আবর্তনের সময় পৃথিবীর দিকে মুখ করা চাঁদের আলোকিত অংশের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। এর ফলে চাঁদের বিভিন্ন দশার সৃষ্টি হয়। আমরা শুধুমাত্র চাঁদের আলোকিত অংশই দেখতে পাই। যখন আমরা চাঁদের আলোকিত অংশ সম্পূর্ণ গোলাকার দেখতে পাই তখন আমরা একে পূর্ণিমার চাঁদ বলি। আর যখন আমরা চাঁদের আলোকিত অংশ একেবারেই দেখতে পাই না তখন একে অমাবস্যার চাঁদ বলি।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন :
১) পৃথিবীর দুই ধরনের গতি কী কী ?
২) দিন এবং রাত কী কারণে হয়?
৩) চাঁদের বিভিন্ন দশার কারণ কী ?
8) গ্রহ ও উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য কী?
৫) গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় কেন?
বর্ণনামূলক প্রশ্ন :
১) ঋতু পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা কর।
২) সূর্যকে পূর্ব থেকে পশ্চিম আকাশে চলমান মনে হয় কেন ? ব্যাখ্যা কর।
৩) পৃথিবীর অর্ধেক উত্তরাংশ সূর্যের দিকে হেলে পড়লে কী ঘটে? তখন দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের কী পরিবর্তন ঘটে?
৪) কীভাবে সৌরজগৎ, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ও মহাবিশ্ব সম্পর্কযুক্ত ?
৫) নিচের ছবি দুইটি দেখ। দুইটি ছবিই দিনের একই সময়ে একই স্থানে তোলা হলেও দেখতে ভিন্ন। এর কারণ কী ?